২০ হাজারের টিকিট বিমান বিক্রি করতো ২ লাখে
প্রকাশিত : ১৫:৪৮, ৮ নভেম্বর ২০২৪
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও এ বছরের শুরুর দিকে ফ্লাইট সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তবে ওই সময় বিমানের কুয়ালালামপুরগামী ফ্লাইটগুলোতে আসন ফাঁকা ছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, ট্রাভেল এজেন্সির সিন্ডিকেটকে বেশি দামে টিকিট বিক্রির সুযোগ করে দিতে বিমানের কর্মকর্তারা তখন কারসাজি করেছিলেন। এছাড়া তৎকালীন বিমানমন্ত্রী ও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তদবিরে ৯১টি টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এবং বিমানের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ৭ আগস্ট এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। টিকিট সংকট তৈরির জন্য চার কর্মকর্তাকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।
ফাতেমা রহিম ভীনার নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে, টিকিট সংকটের সময়েও আটটি বিশেষ ফ্লাইটের মধ্যে পাঁচটিতে ৫৭টি আসন ফাঁকা ছিল। বিমানের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুলের নেতৃত্বে আরেকটি তিন সদস্যের কমিটি ১৭ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া প্রতিবেদনে একই ধরনের টিকিট বিক্রির কারসাজির তথ্য উল্লেখ করেছে।
এ বছরের মার্চে মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা দেয়, ৩১ মে’র পর বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করা হবে। প্রায় ৭০ দিন সময় পেলেও, ভিসা পাওয়া হাজারো কর্মীকে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থ হয় সরকার। গত ৩০ এবং ৩১ মে টিকিট না পেয়ে হাজারো কর্মী ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিড় করেন।
টিকিটের সরকারি মূল্য ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা হলেও রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট কর্মীদের কাছ থেকে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। এ টাকা অনেকেই ঋণ বা সম্পত্তি বিক্রি করে জমা দেন। তবে সেই টাকা ফেরত না পেয়ে কর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েন।
প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, টিকিট না পাওয়া কর্মীদের মাত্র ২৫ শতাংশ অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত এমপি, মন্ত্রী ও নেতাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। মালিকরা পালিয়ে আছেন।
৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ার চাহিদাপত্রের বিপরীতে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পেরেছেন, ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। বায়রার তথ্যমতে, শুধুমাত্র টিকিটের অভাবে ৫ হাজার ৯৫৩ কর্মী যেতে ব্যর্থ হন। ঢাকা সফরে এসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অবশ্য বলে গেছেন, তখন যেতে না পারা কর্মীদের নেওয়া হবে।
বিমানের ইকোনমি ক্লাসে ঢাকা-কুয়ালালামপুর টিকিটের দাম ২০ হাজার ৪৭৫ টাকা হলেও মে মাসের শেষ সপ্তাহে এ টিকিট ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তদন্তে উঠে এসেছে, এই সুযোগ বিমানের কর্মকর্তারাই সৃষ্টি করেন ওভারবুকিংয়ের মাধ্যমে। ৩১ মের বিশেষ ফ্লাইট ছাড়া বিমানের কুয়ালালামপুরগামী কোনো টিকিট সরাসরি সেলস কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা ওভারবুকিংয়ের মাধ্যমে কিছু টিকিট সিন্ডিকেটকে দিয়ে দেন, যা পরে চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ফলে অনেক টিকিট অবিক্রীত থেকে যায়।
তদন্ত চলাকালে কমিটি দেখতে পায় যে, তৎকালীন বিমানমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজমের তদবিরে ৯১টি টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফারুক খান বর্তমানে কারাগারে, এবং শফিউল আজম বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সচিব।
ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ওভারবুকিংয়ে বিমানের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তারা হলেন সহকারী ম্যানেজার ফারহানা আক্তার, উপমহাব্যবস্থাপক এফ এম তাবিবুর রহমান, এবং তৎকালীন পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ফারহানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা, তাবিবুরের নিয়োগ চুক্তি বাতিল এবং সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সালাহউদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও, তাবিবুর ও ফারহানা জানান, পরিচালকের মৌখিক নির্দেশে ওভারবুকিং করেছিলেন। কমিটি উল্লেখ করেছে যে, সালাহউদ্দিনের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এসএস//
আরও পড়ুন